কলেজ পরিদর্শক থেকে পদোন্নতি পেয়ে চেয়ারম্যান হবার কিছুদিনের মধ্যেই বিভিন্ন শাখাতে বিশাল এই রদবদলের ঘটনা ঘটালেন নতুন দায়িত্ব নেয়া চেয়ারম্যান প্রফেসর হাবিবুর রহমান। এই পদায়নে বর্তমান বোর্ড সচিব ড. মোয়াজ্জেম হোসেনসহ প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিশাল একটি স্বার্থ কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বড় পরিসরের আকস্মিক এই বদলীর পেছনে রয়েছে দূর্ণীতির দায়ে বরখাস্ত সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদসহ মোট ১২ জনের নামে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর করা প্রায় সাড়ে আঠারো লাখ টাকার একটি দুর্নীতির মামলা (যার বিশেষ মামলা নং ১৪/২০২০, তাং ২৩/৯/২০২০ ইং) থেকে অব্যাহতি পাওয়া ও সেই সাথে শিক্ষা বোর্ড থেকে ‘এনওসি’ (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) পাবার আশায় বর্তমান উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে বিগত সময়ের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য আসামীদের যোগসাজোসে এই আকস্মিক বিশাল পরিসরে রদবদলের ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য শিক্ষা বোর্ডে কর্মরতদের। কারণ সেই দুর্নীতির মামলা চলমানবস্থায় গেল ৯ সেপ্টেম্বর রোজ বৃহস্পতিবার নগরীর গ্রেটাররোড সোনালী ব্যাংক শাখাতে শওকত নামের এক ব্যক্তি শিক্ষা বোর্ডের অন্তর্গত তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (EIIN) নাম্বার ব্যবহার করে দুর্নীতির সমপরিমাণ অর্থ জমা দিলেও অলৌকীক কারণে বিগত সময়ের বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মকবুল হোসেনকে বিষয়টি শিক্ষা বোর্ডের অর্থ, রাজস্ব ও আইটি শাখা ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অবগত করেননি ! গেল মাসের শেষের দিকে শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে নতুন দায়িত্ব নেওয়া কর্তাকে বিষয়টি ব্যাংক থেকে দাপ্তরিকভাবে জানানো হয়েছে চলতি ডিসেম্বর মাসের ৭ তারিখ সকালে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও বোর্ডের হিসাব শাখার এই ধরণের লুকোচুরির বিষয়গুলোও বিশাল পরিসরের এই বদলী করণের বিষয়টিকে সন্দেহের দিকেই ধাবিত করছে বলে মন্তব্য বোর্ডে কর্মরতদের।
গত ৬ ডিসেম্বর’২১ তারিখে স্মারক নম্বর-৩৩০ (৩৭)/১ম-৮৪/সংস্থাপন (৫ম খন্ড)’র আদেশ বলে ১৭ জন কর্মকর্তার পদায়ন বা বদলীর চিঠি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। যেটি কার্যকর হয়েছে পরের দিন সকাল থেকেই। এর আগে, গত ১৪ নভেম্বর’২১ তারিখে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে অন্য শাখায় বদলী করার পর মাত্র ২২ দিনের মাথায় আবারো নতুন শাখায় বদলীকরণের বিষয়টি নিয়ে সমস্ত শিক্ষা বোর্ড জুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।
এছাড়াও, দুদকের মামলায় বিগত বোর্ড চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের সাথে আসামীর তালিকায় থাকা চারজন কর্মকর্তাকে বসানো হয়েছে অতি গুরুত্বপূর্ণ সব দপ্তরে। বদলী করা হয়েছে নির্দিষ্ট কোন স্বার্থ হাসিলের জন্যই বলে মন্তব্য কর্মকর্তা-কর্মচারিদের।
টাকা জমা দেয়া ঠিকাদার শওকত আলী বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের পাওয়া কয়েকটি কাজ না করেও বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগে মামলাটি করা হয়। তবে সব কাজই করা হয়েছিল। এখন কে টাকা ফেরত দিয়েছে সেটা আমি বলতে পারব না। আমি টাকা দিইনি।’
এ বিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি অসুস্থ, ঢাকায় থাকি। আমি কোনো টাকা ফেরত দিইনি। কে টাকা জমা দিয়েছেন তাও জানি না। মামলার অন্য আসামিরাই এখন মামলা দেখে, তাঁরা দিয়েছে কি না সেটাও জানি না।’
দূর্ণীতি দমনের করা মামলার আসামি শিক্ষা বোর্ডের উপকলেজ পরিদর্শক নেসার উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘কে টাকা জমা দিয়েছে তা আমিও জানি না। আমি তো শুধু মামলার দিন আদালতে হাজিরা দেই। করোনার কারণে অনেকদিন হাজিরাও দেওয়া লাগেনি।
এদিকে নবনিযুক্ত রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি কয়েকদিন আগে দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়টা সম্পর্কে শুনেছি, অফিসিয়ালি কোনো কাগজ পাইনি।’